মহাকাশের গহিন থেকে আরও গহিনে কী আছে? এই জিজ্ঞাসা নতুন নয়। সেই আগ্রহ থেকেই মহাশূন্যে পাঠানো হচ্ছে একের পর এক মহাকাশ যান, চলছে বিস্তর গবেষণা। কেমন হতো যদি প্রজাপতির মতো আকৃতির শত শত মহাকাশ যান বেরিয়ে পড়ত কয়েক আলোকবর্ষ দূরে অনুসন্ধানের জন্য? নিঃসন্দেহে রোমাঞ্চকর এক ব্যাপার হতো সেটা! কিন্তু অনেকেই হয়তো বলবেন, এ শুধু কল্পনাতেই হতে পারে, জীবদ্দশায় দেখে যাওয়া সম্ভব নয়। তাদের জন্য একটা তথ্য—বিশ্বের সেরা মেধাবীরা এখন উঠেপড়ে লেগেছেন এই ধারণার বাস্তবায়নে। বিশ্বখ্যাত পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং ও ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ তাঁদের অন্যতম।
আমাদের সবচেয়ে কাছের সৌরমণ্ডল ‘আলফা সেন্টুরি’-এ অনুসন্ধান চালানোর জন্য ১০ কোটি ডলারের ‘ন্যানোক্রাফট’ বানানোর এক প্রকল্প হাতে নিয়েছেন তাঁরা। ১৩ এপ্রিল রুশ উদ্যোক্তা ইউরি মিলনারের সঙ্গে যৌথভাবে এক সংবাদ সম্মেলনে হকিং বলেন, ‘আজ মহাজগতের দিকে আমরা আমাদের পরবর্তী মহাপদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। কারণ, আমরা মানুষ এবং উড়ে বেড়ানো আমাদের স্বভাব।’
‘ব্রেকথ্রু স্টারশট’ নামের মহাকাশ ভ্রমণের এই প্রকল্পের পরিচালনায় আছেন হকিং, মিলনার ও জাকারবার্গ। নাসার অ্যামস রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক পিট অরডেনকে প্রধান করে এই প্রকল্পে কাজ করছেন বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো, মাত্র কয়েক গ্রাম ওজনের শত শত ক্ষুদ্রাকায় মহাকাশ যান তৈরি করা। এতে থাকবে ক্যামেরা, ফোটন থ্রাস্টারস, পাওয়ার সাপ্লাই, দিকনির্দেশক এবং যোগাযোগের যন্ত্র। একটি রকেটের মাধ্যমে একে আকাশে ছুড়ে দেওয়া হবে। তারপর পৃথিবী থেকে শক্তিশালী আলোকরশ্মি পাঠিয়ে এর বেগ ঘণ্টায় ১০ কোটি মাইলে রূপান্তর করা হবে। আলোর গতির পাঁচ ভাগের এক ভাগ গতিতে এটা চলবে এবং এখনকার যেকোনো মহাকাশ যানের চেয়ে বেশি।
ক্ষুদ্র মহাকাশ যানগুলোর গন্তব্য হবে আলফা সেন্টুরি, যেখান থেকে ছবি এবং তথ্য সংগ্রহ করে পৃথিবীতে পাঠানো হবে। গবেষকেরা মনে করছেন, গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগবে ২০ বছরের মতো। তবে এই প্রকল্পের সাফল্যের জন্য এখনো অনেক প্রকৌশলগত বাধা মোকাবিলা করতে হবে বলে তাঁরা স্বীকার করেছেন। এর সঙ্গে অনেক অর্থ এবং সময়ের বিষয়ও যুক্ত।
মিলনারের মতে, এই প্রকল্পে সব মিলিয়ে এক হাজার কোটি ডলারের মতো খরচ হতে পারে। এত বিপুল অর্থ জোগাড় করা চ্যালেঞ্জ হলেও আশা হারাচ্ছেন না বিজ্ঞানীরা।
মিলনার বলেন, ‘মানবজাতির গল্পটা এক মহাপদক্ষেপের সমাহার। আজ থেকে ৫৫ বছর আগে ইউরি গ্যাগারিন প্রথম মানুষ হিসেবে মহাশূন্যে গিয়েছিলেন। আজ তারকারাজির উদ্দেশে পরবর্তী মহাপদক্ষেপের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
সূত্র: সিএনএন